জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপে প্রথম দিনেই সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে সবাইকে চমকে দিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপের দূরত্ব জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। শিল্পনগরী এই জেলার অনেকটা অবহেলিত ও প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই পবিত্র প্রার্থনালয়। এক পাশে গাজীপুরের কালীগঞ্জ এবং অপর পাশে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলা। নারায়ণগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সচরাচর এই পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন না।
তবুও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় অন্য সবার মতো তারাও সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তাদের উৎসবে মেতে উঠতে। মাসাধিককাল ধরে প্রতিমা নির্মাণ শেষে মহাষষ্ঠীর পূজার মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু হলো নারায়ণগঞ্জের শারদীয় দুর্গাপূজা।
আতলাপুর বাজার মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী বাদল দাস চৌধুরী বলেন, “আমাদের এই মন্দির জেলা সদর থেকে এত দূরে হওয়া সত্তে¡ও জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম স্যার আমাদের পূজা পরিদর্শনে আসায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আমার জীবনে এত আন্তরিক জেলা প্রশাসক কখনো দেখিনি। আমরা হিন্দু স¤প্রদায় যখন কোনো আবদার করি, তিনি কখনো না বলেন না। দ্রæততম সময়ে আমাদের অনুরোধ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের মন্দিরের পাশে একটি অতিথিশালা আছে, যেখান থেকে ভক্তদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। আমরা জেলা প্রশাসক স্যারকে অতিথিশালাটি সংস্কারের অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। এতে আমরা খুব খুশি।”
রূপগঞ্জ উপজেলার শ্রী শ্রী জ্ঞোপাল জিউর মন্দির গোলাকান্দাইল (উত্তর) দাসপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী অবিনাশ দাসও জেলা প্রশাসকের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “উনার কথাবার্তা ও আচরণে মনে হয়েছে তিনি খুব ভদ্র ও শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমাদের আয়োজনের প্রশংসা করে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এবং ভক্তবৃন্দ যাতে নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে পারেন সেই আহ্বান জানিয়েছেন।”
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, “আমরা যখন বড় হয়েছি, তখন কে কোন ধর্মের সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এটাই বাংলাদেশের সৌন্দর্য। এটি ভবিষ্যতেও থাকবে। এটি ধরে রাখতে হবে। এটাই আমাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য। আমরা বিশ্ববাসীর সামনে এটি ফুটিয়ে তুলতে চাই।”
তিনি আরো বলেন, “উৎসব কখনো একা করা যায় না। সকলকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজন করতে হয়। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে নিয়ে উৎসব পালিত হলে সেটি পূর্ণতা পায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে উৎসবের সৌন্দর্য বাড়ে। শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়, সে জন্য আমরা যত মণ্ডপ সম্ভব পরিদর্শনে যাব। আমাদের অন্যান্য কর্মকর্তারাও যাবেন। সরকারের প্রতিটি দপ্তর স্বতঃস্ফূর্তভাবে নজর রাখছে। আমরা আশা করি এবারের উৎসবটি খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। এই দেশ আমাদের সবার। কোনো সমস্যা হলে সেটি আমাদের মিলেমিশে সমাধান করতে হবে। এটি অন্য কারো বিষয় নয়।”
তিনি আরো বলেন, “শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি রাখা হবে না। সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনে জেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর।”
জেলা প্রশাসক প্রথমে গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের শ্রীশ্রী জ্ঞোপাল জিউর মন্দির গোলাকান্দাইল (উত্তর) দাসপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ এবং গোলাকান্দাইল উত্তরপাড়া রাধামাধব মন্দির সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তিনি মণ্ডপগুলোর সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন যে, শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতি বজায় রেখে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। সব শেষে তিনি রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মহাশ্মশান কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। সেখানে জেলা প্রশাসক পৌঁছালে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দর্শনার্থীরা তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসক কিছুক্ষণ সেখানে সময় কাটান এবং সবার সঙ্গে বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন। তিনি মণ্ডপে আর্থিক অনুদান প্রদান করে মন্দিরের উন্নয়নে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।
পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট কানিজ ফারজানা শান্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাশফাকুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপগঞ্জ, অফিসার-ইন-চার্জ রূপগঞ্জ থানা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং পূজা মÐপগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।