নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: “আমাদের সকলের দায়িত্বশীল আচারণ করতে হবে। আজকে আপনে মোটর সাইকেল পুড়লেন, রাস্তা বন্ধ করে রাখবেন। কয়দিন করবেন? এভাবে কি দাবী আদায় হয়ে যাবে? ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে দাবী করবেন আমরা কি মেনে নিবো? কেউ কিন্তু আইনের উর্ধ্বে না। আপনেরা এর আগে সিটি কর্পোরেশন ঝামেলা করেছেন আমরা কিছু বলি নাই। আমাদের ধৈর্য এর বাধ আছে। মানুষের কষ্ট হয় আপনেরা এমন কোন কাজ করবেন না।”
১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককের সম্মেলন কক্ষে অটো চালকদের উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এই কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জের চানমারি এলাকায় উল্টোপথে অটো যাওয়ায় সড়কে যানজট সৃষ্টি হলে যানজট নিরসনে স্বেচ্ছাসেবকরা কিছু অটোর চাকাকে লিক করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবকদের উপর অটোচালকদের একাধিক হামলা ঘটনা এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড অবরোধ করে চাষাড়া থেকে শিবু মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ ঘন্টার যানজটে ভোগান্তির শিকার হয় নারায়ণগঞ্জবাসী। স্বেচ্ছাসেবকদের উপর হামলা এবং পরে স্বেচ্ছাসেবকরা পাল্টা হামলায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত সড়ক অবরোধ রাখার হুমকি দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। এঘটনাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অটোচালকর ও মালিক সমিতি সহ বিকেএমইএ, চেম্বার অব কমার্স, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এবং রাজনৈতিক নেতারা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বসেন।
এসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। এই যানজট নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু সফল হতে পারিনি। এই যানজট নিরসনে এগিয়ে এসেছেন বিকেএমইএ। আমাদের ছাত্ররা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। এখানে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা তাদের জন্য কাজ করবো এবং যারা মোবাইল নিয়েছে ও বাইকে আগুন দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ঘটনাটা সাড়ে ১১ টায় ঘটছে সে ঘটনা আসতে এত সময় কেন লেগেছে। পুলিশ প্রশাসণকে বলবো আপনাদের আরও কাজ করতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে ডিসি বলেন, ছাত্ররা ভাইয়েরা আপনেরা এখানে যারা কাজ করছেন তাদের আমি ধন্যবাদ দিবো। কিন্তু আপনেরা কেন গাড়ীর কাঁচ ভাঙবেন, কেন গায়ে হাত তুলবেন এটা আপনাদের দিয়ে যায় না।আপনেরা শিক্ষিত মানুষ আপনাদের সাথে এবিষয়ে যায় না। ছাত্র ভাইদের প্রতি অনুরোধ আপনেরা আচারণে সচেতন হবেন। আমি বুঝতে পেরেছি আপনাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই আপনাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো সার্টিফিকেট দিবো। রিকশাচালক, অটোওয়ালারাও মানুষ তাদের প্রতি আপনাদের ব্যবহার খারাপ কেন করবেন কেন তাদের গায়ে হাত তুলবেন। এটা তো আপনাদের কাজ না। এই শহরে আপনেরা বসবাস করেন এখানে কেউ আইনের উর্ধ্বে না। কিছু হলে আপনেরা এক জন আরেকজনকে কয়েকজন মিলে মারবেন। অটোর মধ্যে কিভাবে অস্ত্র থাকে আপনেরা সেটা বলবেন। আমি পুলিশ প্রশাসণকে বলবো আপনেরা এটা দেখবেন।
ডিসি অটোচালকদের কড়াভাবে বলেন, আপনেরা শুনেছেন যে বাস আগে ৫ টিপ দিতো এখন তা ৭ টিপ দেয়। যে এম্যাবুলেন্স দেড় ঘন্টায় যেতে পারতো না এখন অল্প সময়ে চলে যায়। চাষাড়ার মোড়ে কোন স্ট্যান্ড নাই কোন স্ট্যান্ড হবে না।কোন যাত্রীও নামবে না।আমরা আগামীকাল সাইনবোর্ড দিয়ে দিবো কোন কোন পর্যন্ত গাড়ী যাবে না। আর এই আইন আপনেরা সবাই মেনে চলবেন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “শহরের শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন,ছাত্ররা এখানে কম আপনেরা বেশি তাই বলে আপনেরা তাই রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করেন।আপনাদের ধরতে পারছে না কারন আপনাদের তো লাইসেন্স নাই। আমাদেরও তো ট্রাফিক পুলিশ মামলা দেয় কই আমরা তো রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করি না। তাহলে আপনেরা কেন করবেন? এখানে কোন পক্ষ বিপক্ষ নাই। আপনেরা এখানে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আপনাদের সভাপতি সেক্রেটারি আছে তারা এসে ডিসি স্যারকে জানাবে। দায় হবে এমন কোন কাজে জড়িয়ে যাবেন না।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স পরিচালক সাঈদ বলেন, শহরের যানজট নিরসনে সময়, শ্রম ও অর্থ দিয়ে কাজ করছে চেম্বার অব কমার্স। এটা কিন্তু চেম্বারের কাজ না।চেম্বারের কাজ না হবার পরও চেম্বার কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও আমাদের ছেলেরা প্রতিনিয়ত লাঞ্চিত হচ্ছে। শুধু এখানে একবার না একাধিক বার আমাদের ছেলেদের উপর হামলার শিকার করছে।ছাত্ররা পুলিশের পিছনে থাকবে কিন্তু সেখানে পুলিশ ছাত্রদের পিছনে থাকছে। ট্রাফিক এর নির্দিষ্ট একটা সীমানা দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেখান থেকে গাড়ী অভার হয় তখন পুলিশ কেনো কাজ করে না।এই বিষয়ে এসপিকে কাজ করতে হবে। এনসিসি তাদের কাজ গুলো ঠিক মত কাজ করছে না সে বিষয়ে আপনেরা দেখবেন। আপনেরা ছাত্র পুলিশ সবাইকে একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (সার্বিক) আলমগীর হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) তারেক আল মেহেদী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জামায়তে ইসলামী মহানগরীর সাবেক আমীর মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমাদ, ইসলামী আন্দোলন মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, বিকেএমইএ পরিচালক আহমেদুর রহমান তনু, ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি রহমান প্রমুখ।