আজ মঙ্গলবার, আগস্ট ২৬, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গাজীপুর  জেলা শ্রীপুরে সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। তথাকথিত আইপিটিভি (ইউটিউব), অনলাইন নিউজপোর্টাল ও যত্রতত্র ফেসবুক লাইভ, প্রেস লেখা স্টিকার, আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে চলাচল করছে ওইসব সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তি। অথচ তাদের কোনো অনুমোদন নেই, নেই কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা পরির্বতন করেই হয়ে যান সাংবাদিক,মাছের পোনা বিক্রেতা, কাঠমিস্ত্রি, মুদি দোকানদার, হলুদ মরিচ বিক্রেতা, সুদের কারবারি, ব্যাটারি বিক্রেতা, ডাক্তারের সহকারী থেকে রাতারাতি সাংবাদিক হয়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন ভোলার অলিতে গলিতে এই নামধারী সাংবাদিকরা। কোন নিউজ লিখতে না পারলেও তারা বড় সাংবাদিক, গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কথিত এই সাংবাদিকরা।

বাল্যবিবাহ, মারামারি, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, পরকিয়া,মেম্বারের অনিয়ম ছাড়া অন্যকোন জনস্বার্থের সংবাদে এই সাংবাদিকদের দেখা মিলে না। তারা শুধু ইউটিউব ও ফেসবুকে একটি প্রোফাইল তৈরি করে সেটিকে টিভি চ্যানেল অথবা নিউজপোর্টাল হিসেবে ঘোষণা করে প্রচার করে হচ্ছে। এমনকি নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের সঙ্গে জড়িতরাও সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে সর্বত্র। এ ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সংবাদ লিখতে না জানলেও নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকার কার্ড কিনে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক। গত এক বছর যাবৎ ভুয়া সংবাদকর্মীদের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে এরা যেখানে-সেখানে অবাধে বিচরণ করছে এরকম কয়েকশ ভুয়া সাংবাদিক। করে যাচ্ছে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড। এসব নীতিহীন কর্মে বাড়ছে গুজব, অপপ্রচার, বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ইদানীং গাজীপুর শ্রীপুর  উপজেলার সাংবাদিক পরিচয়দানকারী   কয়েকজনের ফেসবুকে আক্রমণাত্মক পোষ্টে সাংবাদিকদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছে সাধারণ মানুষ।

সমাজের চিহ্নিত অপরাধীরা এখন সাংবাদিকতা পেশা কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন অনেক নেতাকর্মীর নাম বিক্রি করে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হচ্ছেন। গ্রামে গঞ্জে তাদের ভিজিটিং কার্ডে সয়লাব, নামধারী মানবাধিকার সংগঠন, ভুঁইফোড় অনলাইনের কার্ডের নাম লিখে ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে গ্রামের মানুষদের ব্লাকমেইল করে যাচ্ছেন তারা। গাজীপুর জেলায় শ্রীপুর উপজেলাতে হওয়া এসব সাংবাদিকরা নিউজ তো ভালো কথা নিজের জীবনবৃত্তান্ত ও ভালো করে লিখতে পারবে না বলে জানান   এক সাংবাদিক কিন্তু তাদের দাপটে আজ মূলধারার সংবাদকর্মীরা অসহায় বলেও জানান তিনি।

তাদের এরকম কর্মকাণ্ডের ফলে মূলধারার সাংবাদিকদের বিব্রতকর অবস্থা ছাড়াও মাঝেমধ্যে পড়তে হচ্ছে ঝুঁকির মুখে। এছাড়াও মূলধারার সাংবাদিকেদর ছোট করার জন্য দালালদের অবৈধ আয়ের পক্ষ অবলম্বন করে। এমন বাস্তবতায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি। ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এই ভুয়া সাংবাদিকদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করার দাবি সচেতন মহলের।

গাজীপুর  কর্মরত দেশের বহুল প্রচারিত কয়েকটি মিডিয়ার প্রতিনিধি ও জেলার সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ও নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কার্ডধারীরা। এ ধরনের ভুঁইফোঁড় কথিত সাংবাদিকরা গাজীপুর  বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি, মিল-কারখানা, বেকারিসহ নানা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে করছে চাঁদাবাজি।

এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা শুনলেই বুম হাতে কিংবা আইডি কার্ড ঝুলিয়ে উপস্থিত হয় সেখানে। এরপর নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে জাহির করতে করে নানা অঙ্গভঙ্গি। অনুষ্ঠান শেষে রাজনৈতিক নেতা কিংবা আয়োজকদের পেছনে পেছনে ছোটে মৌমাছির ঝাঁকের মতো। তারা নিজেরাই বিভিন্ন স্থানে গড়েছে প্রেসক্লাবসহ নামে-বেনামে সংগঠন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মূলধারার কিছু সাংবাদিক, থানা পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য রয়েছে তাদের। অপকর্মে জড়িতদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন প্রত্যাশা ভোলার মূলধারার সাংবাদিকদের। এদিকে অপসাংবাদিকতা রোধে জেলা প্রেসক্লাবে একটি জরুরী বৈঠক বসেছে সিনিয়র সাংবাদিকরা। সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতরা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তবে চাঁদাবাজির বিষয়ে কেউ যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় সে ক্ষেত্রে সরাসরি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপসাংবাদিকরা কখনই প্রশ্রয় পাবে না।

Exit mobile version