আজ মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গোদনাইল এলাকায় অবস্থিত গোদনাইল মেঘনা ও পদ্মা ডিপো। অনিয়ম ও দূর্নীতিতে নিমজ্জিত মেঘনায় উল্টো চিত্র হলেও পদ্মা ডিপোতে দূর্নীতি অনিয়ম করে ছাড় পাচ্ছেন না কর্মকর্তারা।

দৈনিক জনদর্পণের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, গোদনাইলে পদ্মা ডিপো থেকে রাতের আঁধারে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে তেল চুরির প্রস্তুুতিকালে দুটি গাড়ি আটক করে বিপিসি কর্মকর্তারা। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে গাড়ি দুটি ডিপোতে প্রবেশ করে। তেল লোড করার সময় বিপিসির একটি টিম গিয়ে গাড়ি দুটি আটক করেন। তবে তার আগেই ১৮ হাজার লিটারের গাড়িতে সাড়ে ১৩ হাজার লিটার তেল লোড করে ফেলে। ডিপো কর্তৃপক্ষ চালানে বাই মিটার (গাড়িতে যে পরিমাণ তেল লোড করা যায়) হাতে লিখে দেন। অর্থাৎ সাড়ে ১৩ হাজার লিটারের বৈধতা থাকলেও তেল লোড করা হতো ১৮ হাজার লিটার। এসময় র‌্যাব-১১ বাহিনীর সদস্যরা তেলের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে ডিপো কর্তৃপক্ষ চালান দেখালেও ব্যাংক পে-অর্ডার দেখাতে পারেনি। বিপিসি’র নিয়ম অনুযায়ী যে পরিমান তেল লোড করার কথা ঠিক সে পরিমান ধারণক্ষমতার গাড়িতে তেল লোড দিতে হবে। আটককৃত গাড়িগুলো সাড়ে ৪ হাজার লিটার বেশি। তার মধ্যে একটি গাড়ি কোনো চালান বা পে-অর্ডার ছিলনা। গাড়ি দুটি লোড করতে পারলে সাড়ে ২২ হাজার লিটার তেল চুরি হতো। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকা।

এদিকে ডিপোতে অনিয়ম ও তেল চুরির ঘটনায় ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. শাকিল মাসুদকে ওএসডি করে বিপিসি। দূর্নীতিবাজ পদ্মা অয়েলের সাবেক এমডি সোবহান দেশত্যাগ করার পর পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নেন মো. মফিজুর রহমান। তিনি এর আগে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশনস) ছিলেন। পদ্মার এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি পদ্মা অয়েলকে সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দূর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দেন। যার সঠিক বাস্তবায়ন দেখা যায় অনিয়মের ঘটনায় ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. শাকিল মাসুদকে ওএসডি করায়।

অপরদিকে, গত ১৩ আগস্ট গোদনাইল মেঘনা ডিপোতে ৯ হাজার লিটার ডিজেল বাদশা টেক্সটাইলের নামে ইনভয়েস করে। ডিজেল ডেলিভারি নেওয়ার জন্য ডিজেল পয়েন্টে ঢাকা মেট্রো-ঢ-১১-০০১৯ নম্বরের ট্যাংকলরী লোড নেয়। এ সময় ৯ হাজার লিটার তেলের সাথে অতিরিক্ত ২ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেলসহ মোট ১১ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেল ওই ট্যাংকলরীতে লোড করা হয়।

জনদর্পণের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের গোদনাইল ডিপোতে কর্মরত অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার কক্সবাজারের আলোচিত গৃহবধূ আফরোজা হত্যা মামলার আসামি মোঃ মাসুদ হাসান এহসানের নির্দেশে মিটারম্যান সবুজ অবৈধভাবে ২ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেল অতিরিক্ত ট্যাংকলরী দিয়ে ড্রাইভারের যোগসাজসে বিক্রি করে। গোদনাইল এসও রোডের স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ রনি ও তার সহযোগীরা খবর পেয়ে গাড়িটি আটক করে এবং ডিপোর ইনচার্জ মোঃ মাহবুবুর রহমানকে জানায়। এ নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ দেন-দরবার চলে।অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোঃ মাসুদ হাসান ডিপো ইনচার্জ ও রনির সহযোগীদের ম্যানেজ করে গাড়িটি ডিপো থেকে বের করে দেয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মিটারম্যান সবুজ ও আজিজকে মিটার থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। আজিজ এ ব্যাপারে কিছু না জানা সত্ত্বেও তাকে অন্যত্র সরানো হয়।এ ব্যাপারে মিটারম্যান সবুজের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অতিরিক্ত ২ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেল দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কার নামে ইনভয়েস হয়েছে তা তিনি বলেননি।

এদিকে এ ঘটনা নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর চ.দা. মোঃ শাহীরুল হাসান।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর চ.দা. মোঃ শাহীরুল হাসান নিখোঁজ বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সমন্ধী ও তাহসিনা রুশদীর আপন ভাই। তার সাথে রয়েছে মেঘনা ডিপো ইনচার্জ মাহবুব ও সহকারী ম্যানেজার মাসুদ হাসান এহসানের সাথে গভীর সখ্যতা।

আরো উল্লেখ্য যে, তেল ডিপোতে যারা সহকারী ম্যানেজার অপারেশন্স পদে দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাঁদের যোগ্যতা ইলেকট্রিক, ইলেকট্রনিক্স ও ক্যামিকেল বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা বা বিএসসি থাকতে হবে। কিন্তু দৈনিক জনদর্পণের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাসুদ হাসান এহসান আইসিটি বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা ও বিএসসি করেন। মেঘনা পেট্রোলিয়ামে এ পদে অসংখ্য যোগ্য প্রার্থী থাকলেও অনিয়মের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ সাবেক এমডি টিপু সুলতান মাসুদ হাসান কে ডিপোতে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে পদায়ন করেছেন।

এদিকে আলোচিত গৃহবধূ আফরোজা হত্যা মামলার আসামি কিভাবে একটি সরকারি ডিপোতে শীর্ষ পদে কর্মরত রয়েছে এ বিষয়ে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর চ.দা. মোঃ শাহীরুল হাসানকে মুঠো প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ” আরে ভাই আপনি পুলিশকে ধরতে বলেন। ও (এহসান) হত্যা মামলার আসামি পুলিশ ধরে না কেনো”।

এ বিষয়ে বিপিসির ডিজিএম এডমিন নাজিম উদ্দীন বলেন, “এটা মেঘনার ইস্যু্। এ বিষয়ে মেঘনার এমডির সাথে কথা বললে ভালো হয়। ওরাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।”

গোদনাইল মেঘনা ডিপো ইনচার্জ মাহবুব এ বিষয়ে বলেন, “আমি নিজেও একজন চাকরিজীবী। নিয়োগ তো হয় চট্টগ্রাম থেকে। ওনাদের সাথে যোগাযোগ করেন মাসুদ হাসান এহসান কিভাবে নিয়োগ পেয়েছে। তারা এ বিষয়ে বলতে পারবে।”

Exit mobile version