আজ মঙ্গলবার, আগস্ট ২৬, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিভাগীয় তদন্ত দাবি 

গোদনাইল মেঘনা ডিপোর অনিয়ম সর্বজনবিদিত। বিভিন্ন সময় তেল চুরি করে বিক্রি করলেও তারা ডিপো ইনচার্জকে সিস্টেম লস হিসেবে দেখায়। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) গোদনাইল মেঘনা ডিপোতে ৯ হাজার লিটার ডিজেল বাদশা টেক্সটাইলের নামে ইনভয়েস করে। ডিজেল ডেলিভারি নেওয়ার জন্য ডিজেল পয়েন্টে ঢাকা মেট্রো-ঢ-১১-০০১৯ নম্বরের ট্যাংকলরী লোড নেয়। এ সময় ৯ হাজার লিটার তেলের সাথে অতিরিক্ত ২ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেলসহ মোট ১১ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেল ওই ট্যাংকলরীতে লোড করা হয়।
জনদর্পণের অনুসন্ধানে জানা যায়, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের গোদনাইল ডিপোতে কর্মরত অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোঃ মাসুদ হাসানের নির্দেশে মিটারম্যান সবুজ অবৈধভাবে ২ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেল অতিরিক্ত ট্যাংকলরী ড্রাইভারের যোগসাজসে বিক্রি করে। গোদনাইল এসও রোডের স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ রনি ও তার সহযোগীরা খবর পেয়ে গাড়িটি আটক করে এবং ডিপোর ইনচার্জ মোঃ মাহবুবুর রহমানকে জানায়। এ নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ দেন-দরবার চলে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোঃ মাসুদ হাসান ডিপো ইনচার্জ ও রনির সহযোগীদের ম্যানেজ করে গাড়িটি ডিপো থেকে বের করে দেয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মিটারম্যান সবুজ ও আজিজকে মিটার থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। আজিজ এ ব্যাপারে কিছু না জানা সত্ত্বেও তাকে অন্যত্র সরানো হয়।
কিছুদিন আগে মেঘনা পেট্রোলিয়ামে অনিয়মের বিরুদ্ধে দৈনিক জনদর্পণসহ কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তসাপেক্ষে খবরের সত্যতা পেয়ে মুখ্য সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। মুখ্য সচিব জ¦ালানি মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে অবহিত করেন। জ¦ালানি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পেরেশনকে (বিপিসি) অসৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশনা পেয়ে বিপিসি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতানকে নির্দেশ দিলে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে গোদনাইল মেঘনা ডিপোতে তদন্তের জন্য পাঠায়। তদন্ত কমিটি অনিয়মের সত্যতা পেলে সাবেক ডিপো ইনচার্জ মোশাররফ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার করুন কান্তি এবং মিটারম্যান কামালকে গোদনাইল মেঘনা ডিপো থেকে বদলি করা হয়।
উল্লেখ্য, পাঁচ মাস আগে সবুজ মবিল গোডাউনে কর্মরত ছিলেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোঃ মাসুদ হাসান তৎকালীন ডিপো ইনচার্জ মোশাররফ হোসেনের কাছে সুপারিশ করে সবুজকে ডিজেল ডেলিভারি পয়েন্টে যোগদান করান।
মোশাররফকে বদলি করার পর নতুন ডিপো ইনচার্জ হিসেবে মাহবুবুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নতুন ইনচার্জের সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোঃ মাসুদ হাসানের সখ্যতার কারণে ডেলিভারি পয়েন্ট এবং তেলের ট্যাংকের পরিমাপের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। এই সুযোগে মাসুদ হাসান বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি তার বিশ্বস্ত মিটারম্যান সবুজকে দিয়ে অতিরিক্ত চোরাই তেল বিক্রি করান।
এ ব্যাপারে মিটারম্যান সবুজের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অতিরিক্ত ২ হাজার ২৫০ লিটার ডিজেল দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কার নামে ইনভয়েস হয়েছে তা তিনি বলেননি। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোঃ মাসুদ হাসানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কোনো কথা না বলে লাইন কেটে দেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ফোন ব্যাক করে উপরোক্ত বিষয়টি জানাতে চাইলে অফিসে তার সাথে দেখা করার অনুরোধ করেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের একজন নেতার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এর বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

Exit mobile version