
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: “সাদাছড়ির আধুনিকায়ন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন” – এই প্রতিপাদ্যে আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী প্রগতি সংস্থার উদ্যোগে সাদাছড়ি বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৯ অক্টোবর বুধবার বিকেল ৩ টায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইসদাইরে সংস্থার নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ সাদাছড়ি বিতরণ অনুষ্ঠান।
প্রমোদনা অনুদান জাতীয় সমাজ কল্যান পরিষদ ঢাকার অর্থায়নে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী প্রগতি সংস্থার আয়োজনে উক্ত সংস্থার মহাসচিব মোঃইউসুফ আলী হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা কার্যালয় নারায়ণগঞ্জের উপ পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান সরদার। এসময় সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাসুদুর রহমানের কোরআন তেলায়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ইউসুফ আলী হাওলাদার বলেন, আমাদের প্রতিবন্ধীদের জন্য আগে সরকারি লোন ব্যবস্থা ছিলো কিন্তু অফিশিয়াল বিভিন্ন জটিলতার কারনে এখন প্রতিবন্ধীদের মাঝে লোন দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ আছে। আপনেরা জানেন আমরা প্রতিবন্ধীরা সমাজে কতটা অবহেলিত। পুনরায় যদি প্রতিবন্ধী লোন প্রদান কার্যক্রম চালু হয় এবং আমাদের লোন দেওয়া হয় তাহলে আমরা প্রতিবন্ধীরা সমাজে কিছু করে চলতে পারবো। এতে আমাদের অন্যের করুনার পাত্র অথবা অন্য কারো কাছে হাত পাততে হবে না।
সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালককে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, স্যার আমাদের প্রতিবন্ধীদের সংস্থা আছে কিন্তু কোন কার্যালয় নেই। আজকে স্যার আপনে যে জরাজীর্ণ বাসায় বসেছেন এটা আমার বাসা।এখানেই কষ্টে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সংস্থাটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিবন্ধীরা এখানে এসে যে বসবে তারও ব্যবস্থা নেই। স্যার আমরা আশাকরি আপনার এবং আমাদের ডিসি মহোদয় স্যারের সহযোগিতায় আমাদেরও একটি নিজস্ব কার্যালয় হবে এবং আমাদের প্রতিবন্ধীদের বসার ফার্নিচারও হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান সরদার বলেন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে করতে আমার ২৫ বছর পার হয়ে গেলো। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যেন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় সে লক্ষ্যেই সমাজসেবা অধিদপ্তর কাজ করছে। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ যেন প্রতিবন্ধীদের সহায়ক হয়। প্রতিবন্ধী বলতে কোন শব্দ নাই আপনেরা হচ্ছেন বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষ। আমার হাত- পা, নাক- মুখ,চোখ যা আছে আপনাদেরও তা আছে। আমার রক্ত লাল আপনাদেরও লাল তাহলে আপনেরা কেন নিজেদের প্রতিবন্ধী ভাবেন।আপনেরা বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ মানুষ তাই আমি সব সময় আপনাদের জন্য কাজ করতে পছন্দ করি এবং আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে সরকার থেকে সহায়তা এমন পরিমান আসে যা নিয়ে আমাদের নিজেদের লজ্জা লাগে। সবার হাতে হাতে তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় না। সাদাছড়ি দিবস উপলক্ষ্যে এবছর আমাদের কাছে ৮টি সাদাছড়ি এসেছে সরকার থেকে। এই ৮ টি নারায়ণগঞ্জে কয়জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দিবো। তাই আমাদের ১০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছে তাদের মাঝে ৮ টি সাদাছড়ি বিতরণ করা হয়েছে। আপনেরা হচ্ছেন আমার হাতের পাঁচটা আঙুলের মত। আমি যে আঙুলে কামড় দেই না কেন আমি আমার হাতেই ব্যথা পাবো। আপনাদের কাকে রেখে আমি কাকে দিবো। আমি চেষ্টা করি আপনাদের সকলকেই সহযোগিতা করতে।
লোনের বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, সরকার থেকে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় আমাদের বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধীদের মাঝে লোন প্রদান করা হতো বিনিয়োগের জন্য। কিন্তু অনেকেই লোন নেয় কিন্তু তা ফেরত দেয় না। আর আমরা লোন তুলতে গেলে এমন ভঙ্গ ধরে যার কারনে আমরাও লোন তুলতে পারি না। আমরা কিন্তু পারি পুলিশ দিয়ে লোনের টাকা তুলতে কিন্তু আমরা সমাজসেবার মানুষ যেই কারনে আমরা পারি না আর আমাদের ইমোশনালভাবে ব্লাকমেইল করে যে কারনে আরও সম্ভব হয় না। তবে আমি আমার কর্মকর্তাদের বলে দিবো যে সকল রেজিস্টার সংগঠন আছে তাদের যেন লোন দেবার ব্যবস্থা করে।
বক্তব্য শেষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে সাদাছড়ি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
এসময় সংগঠনের মহাসচিব ইউসুফ আলী হাওলাদারের সহধর্মিণী রেনু বেগমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নাজমা বেগম, সহ ফারুক হোসেন, মোখলেসুর রহমান, তিতুমীর, মারিয়াম প্রমূখ।

