আজ
|| ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
পাইপলাইনে পানির কারণে ডিপোর তেল গায়েব; অস্বস্তিতে জ্বালানি খাত
প্রকাশের তারিখঃ ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
জ্বালানি খাত যেকোনো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এই খাতের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে এর স্বচ্ছতা ও সুশাসনের ওপর। কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তেল চুরি, সরবরাহে ঘাটতি, পাইপলাইনে পানি মেশানো এবং কারাবন্দি কর্মকর্তার অফিস হাজিরা দেখানোর মতো অনিয়মগুলো সামনে আসে, তখন তা কেবল অর্থনৈতিক সংকটই নয়, জনমনেও গভীর আস্থার সংকট তৈরি করে।যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা জ্বালানি খাতে এক চরম অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযান এবং কর্তৃপক্ষের নীরবতা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি যমুনার ডিপো থেকে চার লাখ লিটার তেল চুরি, সম্প্রতি পাইপলাইনে পাঠানো জ্বালানি তেলের প্রথম পার্সেলে ৩৩ হাজার ৯৫৪ লিটার ঘাটতি, পাইপ লাইনে প্রথম পার্সেলে ৪৫ হাজার লিটার পানি, কারাগারে থেকেও সিবিএ’র সভাপতির অফিস হাজিরা এবং যমুনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে জ্বালানি খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনায় কোম্পানির দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।তেল নিয়ে অভিযোগ আসার পর আমরা তা খতিয়ে দেখছি। একের পর এক ঘটনার কারণে আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে
যমুনা অয়েলের সচিব মো. মাসুদুল ইসলাম।রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি যমুনার ডিপো থেকে চার লাখ লিটার তেল চুরি, সম্প্রতি পাইপলাইনে পাঠানো জ্বালানি তেলের প্রথম পার্সেলে ৩৩ হাজার ৯৫৪ লিটার ঘাটতি, পাইপ লাইনে প্রথম পার্সেলে ৪৫ হাজার লিটার পানি, কারাগারে থেকেও সিবিএ’র সভাপতির অফিস হাজিরা এবং যমুনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে জ্বালানি খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনায় কোম্পানির দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
যমুনা অয়েলের সচিব মো. মাসুদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তেল নিয়ে অভিযোগ আসার পর আমরা তা খতিয়ে দেখছি। একের পর এক ঘটনার কারণে আমাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।’
ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি যমুনা অয়েল কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি মো. আবুল হোসেনকে গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত (২০ দিন) কর্মস্থলে হাজির দেখানো হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট কোম্পানির এজিএম (টার্মিনাল) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
যমুনা অয়েল ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা ডিপো থেকে যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষের কাছে গত ৩০ জুলাই পাঠানো এক প্রতিবেদনে ৩৪ হাজার লিটার জ্বালানি তেলের ঘাটতির বিষয়টি সামনে আসে। প্রতিবেদনটিতে সই করেন যমুনা অয়েলের কুমিল্লার ডিপো ইনচার্জ মো. উজায়ের আহাম্মেদ। আট হাজার ৩৬৩ দশমিক ৯৭৩ টন ডিজেলের মধ্যে ওই ঘাটতি ধরা পড়ে। একইভাবে কুমিল্লার ডিপোর দুটি ট্যাংকে ৪৫ হাজার লিটার পানি ঢুকার তথ্য উঠে আসে একই প্রতিবেদনে। তেল পরিবহনে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপ লাইনে ডিজেল ঘাটতি ও পানি ঢুকে পড়ার ঘটনায় বেশ তোলপাড় হয় জ্বালানি খাতে।
এদিকে, সরকারি মালিকানাধীন যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা ডিপো থেকে সম্প্রতি তিন লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল গায়েব হওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়। দুই দফায় তেল গায়েবের এ ঘটনা জ্বালানি খাতের দুর্বলতার অংশ — বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি তেল চুরি ও অপচয় রোধে সরকারের নির্মাণ করা ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইনে তেল সরবরাহ চালু হয়েছে গত জুনে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত মূল টার্মিনাল থেকে সরাসরি তেল আসছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। এর মধ্যেই যমুনার ডিপোয় এই তেল গায়েবের ঘটনা ঘটল। এ অবস্থায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি হয় গত ৬ অক্টোবর। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে সরকারি তেল সরবরাহের রেকর্ড ও গন্তব্যভিত্তিক হিসাবপত্রে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৫ লিটার তেল সরবরাহে গরমিল পাওয়া গেছে
দুদকের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান
অন্যদিকে, ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি যমুনা অয়েল কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি মো. আবুল হোসেনকে গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত (২০ দিন) কর্মস্থলে হাজির দেখানো হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট কোম্পানির এজিএম (টার্মিনাল) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, যমুনা অয়েলের অপারেটর মো. আবুল হোসেন গত ১০ থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। অথচ ২০ জুলাই বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং থেকে গ্রেপ্তারের দিন থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত এই ২০ দিনের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি ওই চিঠিতে। সেই হিসাবে তিনি কারাগারে থেকেও কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন। অথচ বাস্তবতা হলো তিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন।
কী বলব, সবই তো জানেন আপনারা…
শাহিনা সুলতানা, সচিব, বিপিসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফৌজদারি অপরাধ কিংবা দুর্নীতির কারণে কোনো সরকারি কর্মচারী কারাগারে যাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত হন। আবুল হোসেনের ক্ষেত্রে তা হয়নি।
এদিকে, পতেঙ্গায় অবস্থিত যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান ডিপো থেকে কুমিল্লা ও ফতুল্লা ডিপোতে পাঠানো তেল থেকে পৌনে চার লাখ লিটার গায়েবের ঘটনায় অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৮ অক্টোবর দুদক, চট্টগ্রামের একটি দল এই বিষয়ে যমুনা অয়েলের প্রধান কার্যালয় এবং পতেঙ্গার টার্মিনালে অভিযান পরিচালনা করেন। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর একটি দল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান চালায়। এ সময় তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একইসঙ্গে আলোচ্য অভিযোগের বিভিন্ন রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেন। দুদকের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে সরকারি তেল সরবরাহের রেকর্ড ও গন্তব্যভিত্তিক হিসাবপত্রে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৫ লিটার তেল সরবরাহে গরমিল পাওয়া গেছে।
যমুনা অয়েলে একের পর এক অনিয়মের ঘটনায় জ্বালানি খাতে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে কি না— প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের ( বিপিসি ) সচিব শাহিনা সুলতানা বলেন, ‘কী বলব, সবই তো জানেন আপনারা…।’
অনিয়মের বিষয়ে জানতে যমুনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুস্তফা কুদরুত-ই-ইলাহীকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন ।
প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত
দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত ।
মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪
ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com
Copyright © 2025 Daily Janadarpan. All rights reserved.