
সোনারগাঁ(প্রতিনিধি): নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আষাঢ়িয়ার চর এলাকায় মেঘনা নদীর শাখা মারীখালি নদীর জায়গা ও সরকারী খাস জমিতে একটি কোম্পানির পক্ষে বালু ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। রাতের আধারে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ফেলে এ জমিগুলো দখল করেছে। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রব ও পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিএনপি নেতা দাবি তার ও কোম্পানির ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট করেছেন। সেখানে কোন নদীয় জায়গা নেই।জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ার চর ব্রীজ এলাকায় মেঘনা নদীর শাখা মারীখালি নদীর জায়গা ও সরকারী খাস জমি দখল করে একটি কোম্পানিকে বালু ভরাট করে দেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রব ও পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল। ওই কোম্পানি পক্ষে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রায় ২০কোটি টাকা মূল্যের জমি বালু ভরাট করেন। ফলে এ নদীতে বিভিন্ন নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ছে।এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এ নদীতে গোসল করা থেকে শুরু করে রান্নাবান্নার পানি নেওয়ার জন্য এ স্থান ব্যবহার করতো। বর্তমানের বালু ভরাট করে ফেলার কারনে তা আর সম্ভব হবে না। মানুষের মাছ ধরার জীবিকাও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। নদীর জমির পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা জায়গাও দখল নিয়েছেন।স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে তারা দুই ভাই ওই এলাকায় দখলের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সড়ক জনপথের জায়গা দখল করে দোকান পাট নির্মাণ, কোম্পানির ট্রাক আটকে চাঁদাবাজি, অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করে চুনা কারখানা নির্মাণ, জমি দখল, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করে লুটপাট থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকার কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির প্রথম সারির এক নেতা জানান, ৫আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন কোম্পানিতে গিয়ে আব্দুর রব ও তার ভাই আব্দুল জলিল তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে উৎপাত ও লোকজন মারধর শুরু করেন এক সময় কোম্পানির বিরোধীতা করলেও এখন তারা ওই কোম্পানির পক্ষেই অবস্থান নিয়ে নদীর জায়গায় বালু ভরাটের মাধ্যমে দখল করে দেয়।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আষাঢ়িয়ার চর ব্রীজের পূর্ব পাশে বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে শাখা নদীতে বালু ভরাট করে রাখা হয়েছে। মারীখালির নদীর মধ্যভাগে বাশের খুটি ও বেড়া দিয়ে বালু ভরাট করে। সেখানে গেলে তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। তবে বালু ভরাট কাজ করতে আসা এক ব্যক্তি জানান, আব্দুর রব ও জলিল কোম্পানির বালু ভরাট করেছেন।আষাঢ়িয়ার চর গ্রামের মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, এ নদী ভরাট প্রতিদিন রাতে বেলায় হয়েছে। দিনের বেলায় কোন কাজ করা হয়নি। এ অঞ্চলের সকল প্রকার দখলে এখন আব্দুর বর পরিবার জড়িত। বর্তমানে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অভিযুক্ত সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্বীকার করে বলেন, এখানে কোন নদীর জায়গা নেই। আমার জায়গা ও কোম্পানির ক্রয়কৃত জমিতে বালু ভরাট করা হয়েছে। নদী আরো এক প্লট পরে রয়েছে।হোসেনপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু ভরাটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। দখলদারদের তাদের স্বপক্ষের কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ড কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)তৌফিকুর রহমান বলেন, সরকারি খাস সম্পত্তি ও নদীর জায়গা কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। ঘটনা স্থলে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। দখলের প্রমাণ পাওয়া গেলে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিআইডব্লিউটিএ মেঘনা ঘাট নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, শাখা নদীগুলো বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেখবাল করবেন। কেউ নদীর জায়গা দখল করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।