
সোনারগাঁ(প্রতিনিধি): নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকার গ্যাস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে গড়ে তুলা ২৩টি চুনা ও ঢালাই কারখানা থেকে। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলছে অবৈধ চুনা ও ঢালাই কারখানা। তিতাস গ্যাসের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে এসব করাখানা গড়ে তুলেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব চুরির পাশাপাশি পরিবেশের মারাক্তকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন যেন দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। স্থানীয়রা দাবি করে জানান পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে এসব চুনা ও ঢালাই কারখানা বন্ধের জন্য। তবে এসব অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালানোর ঘোষনা দিলেও তা বাস্তবায়নে ঘড়িমসি করছেন।জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল এলাকায় গ্যাসের মাধ্যমে পাথর গলিয়ে চুনা তৈরি করা হতো। স্থানীয় প্রশাসন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনের সেখানকার চুনা কারখানা গুলো উচ্ছেদ করে। উচ্ছেদের পর সোনারগাঁয়ে এসে তারা চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করে চুনা কার্যখানা গড়ে তোলে। উপজেলার পিরোজপুর, মোগরাপাড়া, কাঁচপুর, সাদিপুর ইউনিয়ন ও সোনারগাঁ পৌরসভায় এসব অবৈধ কারখানা ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব কারখানায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি বিগত ১৭ বছর শেখ হাসিনার শাসন আমলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে এসব কারখানা গড়ে তুলেছেন। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে তারা তিতাস কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এসব কারখানা গড়ে তুলছেন।সূত্র জানায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ারচর এলাকায় সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ ও তার ভাই পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল অবৈধ গ্যাসে চুনা কারখানা গড়ে তুলেছেন। সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ প্রধানের নেতৃত্বে গঙ্গানগর এলাকায় তার ভাগিনা মো.মামুন মিয়া এম এম গার্মেন্টের পরিত্যক্ত ফ্যাক্টুরিতে সিন্ডিকেট চুনা কারখানা গড়েছেন,পিয়ার নগর গ্রামে দুটি ঢালাই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ইসলামপুর এলাকায় আরো একটি কারখানা গড়ে তোলার সময় স্থানীয়রা হামলা করে চুনের ভাট্টি ভেঙ্গে দেয়। এছাড়াও প্রতাপেরচর আরো একটি চুনা কারখানা রয়েছে। একই ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে মোজাফফর আলী ফাউন্ডেশনের পাশে ডালিম ও ইউনিয়ন পরিষদের বিপরিত দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের এক বিএনপি নেতা মুনসুর হোসেনের দুটি কারখানা গড়ে তুলেছেন।সোনারগাঁ পৌরসভার পৌর ভবনাথপুর গ্রামে রফিকুল ইসলামের পরিত্যাক্ত বাড়িতে অবৈধ গ্যাসে ঢালাই কারখানা, দুলালপুর এলাকায় সুরুজ মেম্বারের বাড়ির পাশে গড়ে উঠেছে চুনা কারখানা, কাঁচপুর ইউনিয়নের চেঙ্গাইন এলাকায় ৭টি ঢালাই কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। সাদিপুর ইউনিয়নের দুটি কারখানায় গড়ে উঠেছে। জামপুর ইউনিয়নের মিরেরটেক বাজার এলাকায় ঢালাই কারখানা গড়ে তোলা হয়।মোগরাপাড়া ইউনিয়নে দুটি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিটি কারখানায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসে এসব কারখানায় প্রায়১০কোটি টাকার গ্যাস ব্যবহারে সরকারী রাজস্ব চুরি করছেন।স্থানীয়দের দাবি, চুনা ও ঢালাই কারখানা গুলোতে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের কারনে বৈধ আবাসিক গ্রাহকরা পর্যাপ্ত গ্যাস পায় না। ফলে রান্নাবান্নায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। চুনা কারখানায় পাথর গলানোর কারনে পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। ফলে আশপাশের ফসল ও ফল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। পরিবেশের মারাক্তক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চুনা কারখানার মালিক জানিয়েছেন, তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে তারা এসব কারখানা গড়ে তোলেন। প্রতি মাসে তাদের মাসোহারা দিয়ে থাকেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার আগে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। অভিযানের আগে গুরুত্বপূর্ন সরঞ্জাম তারা সরিয়ে নেন। ভেঙ্গে দেওয়ার দু’ তিনদিন পর পুনরায় ভাট্টি গড়ে তোলা হয়।পিরোজপুর এলাকার আক্কেল আলী জানান,স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এসকল চুনা কারখানা অবৈধভাবে পরিচালনা করে। বর্তমান সরকার এসকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। অভি। অভিযুক্ত মো.মামুন মিয়ার দাবি,বিগত ১৭ বছর শেখ হাসিনার শাসন আমলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে এসব কারখানা গড়ে তুলেছেন। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে তারা এসব কারখানা গড়ে তুলছেন।তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিউিশন কোম্পানির উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব কুমার সাহা বলেন,চুনা ও ঢালাই কারখানায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের বিষয়টি মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো ভেঙে দেওয়ার পরও গড়ে তোলা হচ্ছে। তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।