বয়স খুব বেশি না। এসএসসি পাস করে কলেজে ওঠার প্রস্তুতির সময়েই রাজপথে নেমেছিলেন তাহরিমা। কোনো আইডি কার্ড ছিল না, তবুও আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্তে ছিলেন সামনে সারিতে। পেছনে ফিরে তাকাননি একবারও। গত বছরের সেই ভয়াল জুলাই থেকে শুরু করে ৫ আগস্টের স্বৈরাচার পতন পর্যন্ত—এই লড়াইয়ের একজন সাহসী মুখ ছিলেন তিনি। আজ ৩৬ জুলাই—স্বৈরাচার পতনের বর্ষপূর্তিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এই তাহরিমাকে দেখা গেলো সেই রক্তমাখা ছেঁড়া অ্যাপ্রোন পরে ঘুরে বেড়াতে। অ্যাপ্রোনটি গত বছর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় ছিঁড়ে গিয়েছিল, তখনো সেটি গায়ে ছিল তাহরিমার।‘এই অ্যাপ্রোনে আমার অনেক সহকর্মীর রক্ত লেগে আছে,’ চোখ ভেজা কণ্ঠে বলেন তাহরিমা। আজকের এই আনন্দের দিনে আমি তাদের স্মরণ করছি। যারা শহীদ হয়েছেন, যারা এখনো পঙ্গু হয়ে শুয়ে আছেন। তাদের কারণেই আমরা আজ বিজয় উদযাপন করছি।
আন্দোলনের শুরুর দিকে আজিমপুর এলাকায় সক্রিয় থাকলেও পরে অবস্থান নেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এলাকায়। কারণ ছাত্রলীগের হুমকি, গালাগালি ও জীবননাশের ভয় ছিল প্রতি মুহূর্তে। তাহরিমার ওপর পারিবারিক চাপও বাড়তে থাকে। মা-বাবা অনুরোধ করতে থাকেন—গ্রামে ফিরে যাও, ঢাকার অবস্থা ভয়াবহ। কিন্তু তিনিও ছিলেন অনড়। ১৮ জুলাই থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন তাহরিমা। আমার মা-বাবা ভাবছিলেন আমি মারা গেছি। পরে টিভি নিউজে আমাকে দেখে বুঝতে পারেন আমি এখনো বেঁচে আছি। তাহরিমা বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহতদের আনা-নেওয়ার সময় শত শত মরদেহ চোখের সামনে দেখেছি। এমন অবস্থা হয়েছিল, হাসপাতালের টয়লেটেও মরদেহ রাখা হতো। জরুরি বিভাগের মেঝেতে জমে গিয়েছিল রক্ত। তাহরিমার কাছে তখন কোনও স্টুডেন্ট আইডি ছিল না। আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে একাধিকবার বাঁধার মুখে পড়েন। পরে এক সহকর্মীর কাছ থেকে একটি মেডিকেল অ্যাপ্রোন সংগ্রহ করেন যেন অন্তত একজন চিকিৎসা শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন।
তবুও থেমে থাকেনি হামলা। সেই অ্যাপ্রোন ছিঁড়ে ফেলে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা। আজ সেই ছেঁড়া ও রক্তমাখা অ্যাপ্রোন পরে বিজয় উদযাপন করতে এসেছেন তাহরিমা। এই ছেঁড়া অ্যাপ্রোন আমার অস্ত্র। এটা আমার বিজয়ের প্রমাণ, বলেন তিনি। তাহরিমার ভাষায় শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে এই দিনটি হ্যাপি পলাতক দিবস। বলেন, আপা আজ থাকলে আপনাকে একটা শাড়ি এনে মঞ্চে টাঙিয়ে রাখতাম। আপনি কোথায় আছেন? তাহরিমা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক সংস্কার করেছে। তবে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো জুলাই সনদ, যেটা আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করবেন। এই সনদেই লেখা থাকবে আমাদের সংগ্রামের প্রতিফলন, ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা। তাহরিমা বলেন, আমার বাংলাদেশ যেন সবসময় ভালো থাকে। এই স্বাধীনতা, এই বাকস্বাধীনতা আমরা পেয়েছি শহীদ ভাই-বোনদের ত্যাগের বিনিময়ে। আজ আমি শুধু আনন্দ করছি না, আমি সেই রক্তঝরা দিনগুলোকেও স্মরণ করছি।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন । প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত । মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪ ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com