
বিভাগীয় তদন্ত দাবি ভুক্তভোগীদের
মেঘনা পেট্রোলিয়ামে নিয়োগ পরীক্ষায় এমডি টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ৪ঠা জুলাই মেঘনা পেট্রোলিয়ামে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশ থেকে অসংখ্য আবেদনকারী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১১ জুলাই উক্ত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণার পরপরই এমডি টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ হলো- পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলেও অর্থের বিনিময়ে তাকে উত্তীর্ণ করা। অনিয়মের মাধ্যমে উত্তীর্ণ করার কথা বলে পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া।
দৈনিক জনদর্পণের অনুসন্ধানে জানা যায়, তেজগাঁও গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রের ২০৫ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা চলাকালীন তিনজন অনুপস্থিত ছিলেন। যাদের রোল নং-২৩০০০১৫৮, ২৩০০০১৫৯ ও ২৩০০০১৬১। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্টে ২৩০০০১৫৯ রোল নম্বরধারী পরীক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে পুরো কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা এ নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বাতিলসহ শ্রমিক-কর্মচারী বাছাই/নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
এ ব্যাপারে পরীক্ষার্থী মোঃ ফয়সাল (যার রোল নম্বর ২৩০০০১৬২) বলেন, ‘আমি তেজগাঁও গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রের ২০৫ নম্বর কক্ষে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। এই কক্ষে তিনজন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একজন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীকে (যার রোল নম্বর ২৩০০০১৫৯) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়। আমি এ নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বাতিলসহ বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’
উক্ত নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর মধ্যে চার জন (মোঃ রতন, মোঃ ওমর ফারুক, মোঃ তারেক ও সিকিউরিটিতে মোঃ হাসিব) মেঘনা পেট্রোলিয়ামে অস্থায়ীভাবে কর্মরত আছেন। অর্থবাণিজ্যের ঘটনা আড়াল করার জন্য মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কর্মরতদের বাদ দিয়ে কৌশলে বাহিরের পরীক্ষার্থীদের পাস করানো হয়।
এর আগে বিভিন্ন সময় মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এমডি টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে তেল চুরি, নিয়োগ বাণিজ্য, পোস্টিং বাণিজ্য, বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব সংবাদ প্রকাশের জেরে সংবাদকর্মীদের উপর চড়াও হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে জাতীয় দৈনিক ‘জনবাণী’র সংবাদকর্মীর উপর টিপু সুলতানের নির্দেশে তার অনুগতরা আক্রমণ চালায়। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকায় শিরোনাম হয়।
শ্রমিক-কর্মচারী বাছাই/নিয়োগ কমিটিতে টিপু সুলতানের আস্থাভাজনদের রাখা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আহ্বায়ক হিসেবে সঞ্জীব নন্দী, জেনারেল ম্যানেজার (এ এন্ড এফ); সদস্য সচিব হিসেবে মোঃ আবুল মেরাজ, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) (চলতি দায়িত্ব); সদস্য হিসেবে যথাক্রমে- মোঃ মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন্স); মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরী, জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর); রেজা মোঃ রিয়াজউদ্দিন, জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) ও রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী সচিব (বাজেট শাখা), জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, উক্ত কমিটিতে ছিলেন।
আগামী ২৭ জুলাই এমডি টিপু সুলতানের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। তার চাকরির মেয়াদ থাকাকালীন তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অপতৎপরতায় মেতে উঠেন। উক্ত বিষয়ে এমডি টিপু সুলতানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করেও আমাদের প্রতিনিধি ব্যর্থ হন।