আজ
|| ৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
গোদনাইল মেঘনা ডিপোকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন ডিপো ইনচার্জ মোশারফ ও করুন কান্তি
প্রকাশের তারিখঃ ৭ মে, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গোদনাইলে অবস্থিত মেঘনা ডিপো। এক সময় তেলচুরির সিন্ডিকেট বাইরে থাকলেও এবার ডিপোর ভেতরেই গড়ে উঠেছে এ সিন্ডিকেট। মেঘনা ডিপোকে বর্তমানে দুর্নীতি ও তেলচুরির আখড়া বানিয়েছেন ডিপোরই দুই অপারেশন কর্মকর্তা ইনচার্জ মোশারফ হোসেন ও সহকারি ম্যানেজার (অপারেশন্স) করুন কান্তি হাওলাদার। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের ১৬ বছরের শাসন আমলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতা ও তোষামোদি করে তিনি মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বৃহৎ সকল ডিপোতে চাকরি করেছেন। ঢাকা সহ দেশের ১৬ জেলায় তেল যায় মেঘনা ডিপো থেকে। গোদনাইল মেঘনা ডিপোতে যোগদানের পর ডিপো ইনচার্জ মোশারফ ও করুন কান্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তারা। গোদনাইল মেঘনা ডিপোতে নানা অনিয়ম ও যোগসাজশ করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগ মিলেছে এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, ডিপোতে অকটেনের সাথে ডিজেল মিক্সিং করে বাজার নির্ধারিত কম মূল্যে নির্দিষ্ট ফিলিং স্টেশনে বিক্রি করে মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দুর্নীতিবাজ এ চক্র। অকটেনের সাথে ডিজেল মিক্স করতে এ কাজে সহায়তা করেন ডিপোর পাম্প চালক জাহাঙ্গীর। প্রশ্ন আসতে পারে এ ডিজেল কোথায় পায়? ডিপো ইনচার্জ মোশারফ ও করুণ কান্তি এজেন্সির মাধ্যমে ব্যক্তিগত টাকায় পে অর্ডার করে এসব তেল বিক্রির কারসাজি করে থাকে। প্রতিদিন ৯০০০ লিটার ক্রয়কৃত ডিজেলের সাথে অকটেনের মিক্সিং করা হয়। কিন্তু যে নামে ডিজেলের ইনভয়েজ করা হয় সেটি ডিপোতে এন্ট্রি দেখানো হলেও এ নামে তেল বের হয় না ডিপো থেকে। পরবর্তীতে অকটেন ও ডিজেল মিশ্রিত এ তেল ডেলিভারি দেন মোশারফ ও করুন কান্তির দুর্নীতির দুই সহযোগী কামাল ও আলামিনের মাধ্যমে ঢাকার খিলক্ষেতে নিকুঞ্জ ফিলিং স্টেশনে বিপিসি নির্ধারিত বর্তমান দাম থেকে ৫ টাকা কমে তেল বিক্রি করেন। এভাবে প্রতিদিন ৯০০০ হাজার লিটার তেল বিক্রি করে লাখ লাখ ও মাসে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ডিপো ইনচার্জ মোশারফ ও করুন কান্তি হাওলাদার। জানা যায়, ডিপোতে ব্যক্তিগত মনোনীত পার্টিদের স্লিপের মাধ্যমে গাড়ি ডেলিভারি দেয়া হয়। যা আইনগত বৈধ নয়। সরকারি ডিপোতে ইনভয়েজ ব্যতীত গাড়ি বের হওয়া আইন বহির্ভূত। কিন্তু ডিপোতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এসব অনিয়ম। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সারাদিনের ডেলিভারি শেষ হলে কত লিটার এক্সেস তেল বিক্রি করা হয় তা থেকে পরবর্তীতে এক্সেস তেল বাদ দিয়ে ইনভয়েজ করে। রাতের আঁধারে মিটারম্যান কামালের মাধ্যমে মিটার এডজাস্ট করেন করুন কান্তি হাওলাদার। গোদনাইল মেঘনা ডিপোর বর্তমান ইনচার্জ মোশারফ একসময় খুলনা ডিপোতে ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গোদনাইল মেঘনা ডিপোতে যোগদানের উদ্দেশ্যে সুকৌশলে তিনি প্রথমে তার বিশ্বস্ত করুন কান্তি হাওলাদারকে খুলনা ডিপো থেকে মেঘনা ডিপোতে সহকারী ম্যানেজার (অপারেশন্স) হিসেবে ট্রান্সফার করেন। পরে মিটারম্যান কামালকেও তিনি খুলনা ডিপো থেকে মেঘনা ডিপোতে ট্রান্সফার করেন। পরে তিনি নিজে মেঘনা ডিপোতে ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। মোশারফ যখন থেকে খুলনার মেঘনা ডিপোতে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পান তখন থেকে তার সম্পদের পরিমাণ রাতারাতি পরিবর্তন হতে থাকে। তার স্ত্রী সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে জনদর্পণের অনুসন্ধানে। গত কয়েকদিন আগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ডিপোতে দুর্নীতির বিষয়টি অবহিত করলে অডিটে আসার বিষয়টি আগে থেকেই মেঘনা ডিপো ইনচার্জ কে জানিয়ে দেয়া হয়। আগে থেকেই বিষয়টি অবহিত হয়ে সকল অনিয়ম ঠিকঠাক করে রাখেন ডিপো ইনচার্জ মোশারফ ও সহকারী ম্যানেজার করুন কান্তি। পরে নামকাওয়াস্তে অডিট এসে কোন ত্রুটি পাওয়া যায়নি মর্মে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। ডিপোর একাধিক সূত্র জানায়, ডিপোতে চলমান দুর্নীতির বিষয়ে পাম্প চালক জাহাঙ্গীর, মিটারম্যান কামাল ও আল-আমীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে। দুদকের এক কর্মকর্তার সাথে এবিষয়ে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, করুন কান্তি ও মেঘনা ডিপো ইনচার্জ মোশারফ এর বিরুদ্ধে আমরা দুটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা অভিযোগ দুটির তদন্ত করছি। এ বিষয়ে সত্যতা মিললে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে বক্তব্য নিতে গোদনাইল মেঘনা ডিপো ইনচার্জ মোশারফ হোসেনের (০১৭১১৬৮...৯৯) নম্বরে একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম জানান, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। ডিপোর ভেতরে কি ঘটে না ঘটে সে সম্পর্কে আমাদের জানার কথা না। এসব দেখার জন্য বিপিসি রয়েছে তারা তদন্ত করে দেখতে পারে। যদি কেউ আমাদের অনিয়মের তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করে সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।
সম্পাদক: মো: রবিউল হক। প্রকাশক: মো: আশ্রাফ উদ্দিন ।
প্রকাশক কর্তৃক বি এস প্রিন্টিং প্রেস, ৫২/২, টয়েনবি সার্কুলার রোড (মামুন ম্যানশন, গ্রাউন্ড ফ্লোর), থানা-ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে মুদ্রিত
দেলোয়ার কমপ্লেক্স, ২৬ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক (হাটখোলা), ওয়ারী, ঢাকা -১২০৩ থেকে প্রকাশিত ।
মোবাইল: ০১৭৯৮৬৫৫৫৫৫, ০১৭১২৪৬৮৬৫৪
ওয়েবসাইট : dailyjanadarpan.com , ই-পেপার : epaper.dailyjanadarpan.com
Copyright © 2025 Daily Janadarpan. All rights reserved.